পিরিয়ডের কেন হয়

পিরিয়ড কেন হয়, আসলে পিরিয়ড কোনো রোগ নয়৷ প্রতিটা নারীর জীবনচক্রের একটা অংশ৷ তাই প্রতিটা মেয়ে যাতে পিরিয়ড বিষয়টিকে আতঙ্ক হিসেবে না দেখে স্বাভাবিকভাবে দেখতে শেখে এবং সচেতন হয়, সেজন্য পরিবারের অবদান জরুরি৷

পিরিয়ড মূলত মেয়েদের প্রজনন ক্ষমতার সূচনা ঘটায়। সন্তান ধারন ক্ষমতা নির্দেশ করে প্রতিমাসে একবার গর্ভধারনের সুযোগ সৃষ্টি করেন। 

বয়ঃসন্ধিকালে একটি মেয়ের ডিম্বাশয়ে প্রায় ৩-৪ লক্ষ অনিষিক্ত ডিম্বাণু থাকে। 

অগ্র মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস ও পিটুইটারি গ্রন্থিতে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন নিঃসৃত এর মাত্রা কমে যাওয়ার জন্য এন্ডোমেট্রিয়ামের আর বৃদ্ধি ঘটে না। 

রক্তের অভাবে তখন এন্ডোমেট্রিয়ামের ধমনী প্রসারিত হয়। যার জন্য ধমনী ও কৈশিক নালিকা ভেঙে যোনিপথ দিয়ে রক্ত ক্ষরণ শুরু করে। 

 পিরিয়ডের সময় প্রোস্টাগ্লান্ডিন হরমোনের প্রভাবে জরায়ু সংকুচিত হয়ে যায়। যাদের শরীরে প্রোস্টা গ্রান্ডিন মাত্রাতিরিক্ত থাকে তাদের মূলত ব্যথা হয়। তবে সবার যে পেট ব্যথা হবে এমনটাও না। 

পিরিয়ড শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ আগে থেকে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া যায়। যেমন- মুড সুইং, স্তন ব্যথা, কোমর ব্যথা, তলপেট ব্যথা, জ্বর, মুখে ব্রন, বমি বমি ভাব, খাবারে অরুচি, মাথা ঘোরা, হাত পা ঝিনঝিন করা ইত্যাদি। 

পিরিয়ডের কেন হয়

মেয়েদের তলপেটে ব্যথা কমানোর উপায়

তলপেটে ব্যথা মেয়েদের একটি পরিচিত সমস্যা। তবে এটা যে সব সময়ই মেয়েদের সমস্যা, তা নয়। কেননা জরায়ু, ডিম্বাশয় ছাড়াও এখানে আছে মূত্রথলি, বৃহদন্ত্রের কিছু অংশ, অ্যাপেনডিক্সত।

লপেটের ব্যথা কখনো কখনো মামুলি ব্যাপার, আবার কখনো গুরুতর। তাই জেনে নিন তলপেটের ব্যথা কেন হয় এবং কী করবেন:

* মাসিকের সময় তলপেটে ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক, ১০ জনে ১ জন নারীর এটা তীব্র হতে পারে। জরায়ুতে টিউমার, ফাইব্রয়েড বা এন্ডোমেট্রোসিস থাকলে ব্যথা হবে। ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নির্গত হওয়ার সময় কারও কারও ব্যথা অনুভূত হয়।

* মেয়েদের প্রস্রাবে সংক্রমণ খুবই হয়। আর এতে তলপেটে ব্যথা হতে পারে। পাশাপাশি প্রস্রাবে জ্বালা, প্রস্রাবের সময় ব্যথা, জ্বর জ্বর ভাব থাকতে পারে।

* জরায়ু ও আশপাশে সংক্রমণ হলে তাকে পেলভিক ইনফ্লামাটরি ডিজিজ বলে। এতে তলপেটে ব্যথা, জ্বর,¯ প্রস্রাব নির্গত হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। অনেক সময় এ সংক্রমণ দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে।

* অ্যাপেনডিসাইটিসের ব্যথা প্রথমে শুরু হয় নাভির চার দিকে, তারপর তা স্থায়ী হয় তলপেটের ডান দিকে। সঙ্গে বমিও হতে পারে।

* অনেক সময় ভ্রূণ জরায়ুতে স্থাপিত না হয়ে ডিম্বনালিতে স্থাপিত হয় এবং ডিম্বনালি ফেটে যায়। এটি একটি জরুরি অবস্থা। পেটে প্রচণ্ড ব্যথার পাশাপাশি পুরো তলপেটে রক্তক্ষরণের কারণে রক্তচাপ কমে যেতে পারে।

পিরিয়ডের কেন হয়

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় ঔষধ

১/ আইবুপ্রোফেন

২/ অ্যাসপিরিন

আসলে আইবুপ্রোফেন হলো মাসিক বা পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে অনেক সাহায্য করে থাকে। আমারা বেশির ভাগ মানুষ জানি না যে আই ব্যথা আমাদের কেন হয়ে থাকে?

সাধারণত পিরিয়ডের ব্যথা প্রধানত হয়ে থাকে ‘প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন’ নামের একটি কেমিক্যালের কারনে।

আর তাই আইবুপ্রোফেন নামের এই ঔষধটি সেবনের ফলে পিরিয়ডের ব্যথাকে থামিয়ে দেয় এবং এর কারনে ব্যথা অনেক অংশে কমে যায়।

আবার দেখা যায় যে, এই ঔষধটি খাওয়া পরে ১০–৩০ মিনিট পরেই ব্যথা আস্তে আস্তে কমে যায়।

আইবুপ্রোফেন ৪০০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট পিরিয়ডের সময় ২- থেকে ৩ টা খেতে হবে। ৩ - ৫ ঘন্টা পর পর ঔষধটি খেতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে যে, ১২ বছরের উপরে বা এর বেশি হলে কিন্তু ঔষধটি খেতে পারবে।

আইবুপ্রোফেন ‘এনএসএআইডি’ গ্রুপের ঔষধ। এই ঔষটি শুধু মাত্র ভরা পেটে খেতে হবে।খালি পেটে খেলে পেটের বা শরীরের বিভিন্ন সমস্যা করতে পারে। 

ঘরে থাকা যে কোন খাবার খাওয়ার পরেই ঔষধটি খেতে পারবেন, যেমন দুধ খাওয়ার পরে ও খাওয়া যায়। তবে ঔষধ বেশি দিন লাগিয়ে খাওয়ার কোন দরকার নেই। এতে সমস্যা হতে পারে।

আবার মাসিকের ব্যথা কমাতে আইবুপ্রোফেন নামের ঔষধ এর চাইতে প্যারাসিটামল অনেক বেশি কাজ করে। তবে এই ঔষধ না খাওয়া থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। কারন এর ফলে

১/ কোন নারীর যদি অ্যাজমা বা হাঁপানির রোগ থাকে তবে, তাদের না খাওয়াই ভালো।

২/ আবার যাদের পাকস্থলী, লিভার, কিডনির মতো বিভিন্ন ধরনের রোগ বা যাদের হার্টের সমস্যা আছে।

৩/ অনেকেরই পেটে সমস্যা থাকে বা যাদের আলসার অথবা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তাদের।

উপরের উল্লেখিত সমস্যা যাদের আছে তাদের ক্ষেত্রে যখন পিরিয়ডের ব্যথা হবে তখন আইবুপ্রোফেন ঔষধের পরিবর্তে ‘এনএসএআইডি’ গ্রুপের অন্য ঔষধ খেতে পারেন। ঔষটির নাম হলো অ্যাসপিরিন।

 এই ঔষটি ভরা পেটে খেতে হবে । এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে ১৫ বছরের নিচে যারা আছে তাদের ক্ষেত্রে এটি সেবন না করাই উচিত হবে।

এই সব ঔষধ খাওয়ার আগেই অবশ্যই গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ’ (ওমিপ্রাজল) খেতে হবে যা ডাক্তাররা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে।


পিরিয়ডের কোমর ব্যথা কমানোর উপায়

পিরিয়ডের সময়ে নারীদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। পিরিয়ডে পেট, পিঠ ও কোমরে অসহ্য ব্যথা হতে পারে। এসব ব্যথার মধ্যে রয়েছে কিছু ঘরোয়া সমাধান।

১. পিরিয়ডের সময় কোমর ও পিঠের ব্যথা কমাতে আদার রস খেতে পারেন। নারী শরীরের যে হরমোনটি ব্যথার কারণ, তার ক্ষরণ আটকায় আদা। 

আদা চা খেতে পারেন বা আদাকুচি গরম জলে ফুটিয়ে ছেঁকে মধু মিশিয়ে অল্প অল্প করে খেলেও ব্যথা কমবে। 

২. পিরিয়ডের সময় বাইরের ফাস্টফুড খাবেন না। বাইরের খাবার শরীরে আরও অস্বস্তি সৃষ্টি করে। এই জতীয় খাবার বাড়িয়ে দেয় পিঠ ও কোমরের ব্যথাও। 

৩. খেতে পারেন ফল। যেসব ফলে আছে প্রচুর পানি ও খনিজ পদার্থ।পটাশিয়াম সমৃদ্ধ কলা বেশি করে খেতে পারেন। 

এছাড়াও দুপুর ও রাতের খাবারে রাখুন বেশি পরিমাণে সবজি। শরীরে এই সময় প্রয়োজন আয়রনসমৃদ্ধ খাবার। তাই ফলের মধ্যে বেদানা, খেজুর খেতে পারেন।  

৪. হারবাল চা পান করতে পারেন। এতে পিঠ ও কোমরের ব্যথা কমবে। এ ছাড়া খেতে পারেন লেবুরস দেয়া চা ও আদা চা। এসব চা পিরিয়ডের সময় হওয়া ক্লান্তিভাব কমাতেও সাহায্য করে।

৫. প্রচুর পানি পান করতে হবে। পানি শরীরের বিভিন্ন আন্তঃক্রিয়া সচল রাখতে ও খাবার ঠিকমতো হজম করতে সাহায্য করে। 

৬. পিরিয়ডের সময় ব্যথা সহ্যসীমার মধ্যেই সাধারণত থাকে। যদি তা না হয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় অসহ্য ব্যথা হতে থাকে, অবশ্যই গাইনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

পিরিয়ডের কেন হয়

পিরিয়ডের ব্যথা কোথায় হয়

পিরিয়ডের ব্যথা সাধারণত পেট কামড়ানোর মতো ব্যথা হয়। এই ব্যথা কোমরে ও ঊরুতে ছড়িয়ে যেতে পারে।

কখনো কখনো পেটের ব্যথাটি কিছুক্ষণ পরপর প্রচণ্ডভাবে কামড়ে ধরা বা খিঁচ ধরার মতো করে আসা-যাওয়া করে। অন্যান্য সময়ে একটানা ভোঁতা ধরনের ব্যথা হতে পারে।

ব্যথাটি একেক মাসিকের সময়ে একেক রকম হতে পারে। কোনো কোনো মাসে হয়তো সামান্য অস্বস্তির মতো অনুভব হয় অথবা একেবারেই কোনো ব্যথা হয় না। অন্যান্য মাসিকের সময়ে আবার বেশ ব্যথা হতে পারে।

তবে কখনো কখনো মাসিক চলাকালীন সময়ের বাইরেও তলপেটে এরকম ব্যথা হতে পারে।

প্রিয় পাঠক ভাই ও বোনেরা আপনারা যারা পিরিয়ডের সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন আশা করব আপনারা আমার এই আর্টিকেল থেকে জানতে সক্ষম হয়েছে। 

আপনারা যারা এই দিক নির্দেশনাগুলো মেনে চলবেন তারা হয়তো কিছুটা হলেও শারীরিকভাবে সুস্থতা মনে করবেন, সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন। 

Unique Code wait
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post